ফজলুল বারীঃ আমরা যারা তৃতীয় বিশ্বের মানুষ, দেশে হোক বিদেশে হোক আমাদের বেশিরভাগের সংসার জোড়াতালির। এটা যে কোন প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের বেলাতেও তাই। এসব জোড়াতালির নানান ঘটনা ধরা পড়লে তা সুযোগমতো প্রচার প্রসারেও আমরা মজা পাই। এসব আমাদের এক রকম বিনোদন মাধ্যমও বটে। এসব বিনোদনে মউজ করার সময় আমরা আমাদের নিজেদের ছিদ্রের খবরও ভুলে যাই। কখনো কখনো ব্যক্তি সমাজ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে যখন কোন ঘটনা ঘটে গেলে তখন জ্যোতিষীর মতো নানাকিছু মেলানোর চেষ্টা করি। দীর্ঘমেয়াদী লাভক্ষতির বিষয়টা টের পাই পরে।
বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের নানাকিছু প্রায় গুছিয়ে আনেন তখনই তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাকশালের দোষ দেয়া হয়েছে! বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপর যদি বাকশালের কার্যক্রম শুরু করা হতো তখন কি এর বিরোধিতা করার কেউ থাকতো? বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে অনেকে অনেক দুই নাম্বারিও করেছেন। তখন যে অর্থনৈতিক খাতগুলো ছোট মাঝারি পর্যায়ের ছিল তাই সেই দুই নাম্বারির পরিমানগুলোও ছিল ছোট। কিন্তু একজন নেতার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম আড়াল করে হত্যাকান্ড সাজাতে কিছু দুইনম্বরি গল্পের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতেন!
কেউ তখন ভাবার চেষ্টা করেননি যে রাষ্ট্রপতির ছেলে চাইলেতো ব্যাংক চলে আসে তাঁর বাড়িতে। তাকে কষ্ট করে ডাকাতির জন্য যেতে হয়না। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জানা গেলো বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের কোন ব্যাংক একাউন্টও ছিলোনা। আবাহনী ক্রীড়া চক্র আর জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোটের মতো সংগঠন ছাড়া কোন ব্যক্তিগত সম্পদও পাওয়া যায়নি শেখ কামালের। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশের জাতির পিতাকে হত্যার সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক নানান দায় কিন্তু বাংলাদেশকে বহুদিন বহন করে যেতে হয়েছে। এবং এখনও হচ্ছে।
এখনও বাংলাদেশের অনেক সমস্যা। বড় সমস্যা ছোট দেশের বিশাল ব্যক্তি স্বার্থ ধান্ধার জনগোষ্ঠি। পরিবারে রাজনীতিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব স্বত্বেও অবিস্মরণীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে দেশ। আরও অনেককিছু অর্জন করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু মানুষগুলো যে আমাদের মতো লোভী, তাই অনেককিছু অর্জন করা যায়নি। কিন্তু দেশটার এতোটা অগ্রগতির অন্যতম কারন শেখ হাসিনার মতো একজন সর্বক্ষনিক প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব। বঙ্গবন্ধু দুহিতা কোন কোন ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর চাইতে প্রাজ্ঞ। সর্বক্ষনিক প্রধানমন্ত্রী হওয়াতে দেশের সবকিছু তাঁর নখদর্পণে। একইকারনে ভুলও অনেক হয়। শেখ হাসিনা তা শুধরানোতে দেরি করেননা। এরজন্য যিনি যেটা চেষ্টা করেন শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়না।
ক্ষমতার পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো দেশে সামরিক ক্যু অনেকের মোক্ষম অস্ত্র। এরজন্য দেশি বিদেশি স্বার্থ কাজ করে। এরজন্য ক্ষমতাসীন মহল সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব সেভাবে সাজায়। তেমন চিন্তায় জেনারেল মঈনকে সেনা প্রধান করা স্বত্তেও শেষ রক্ষা না হওয়ার কান্না কষ্ট এখনও বিএনপিতে। এই সরকারও সেনা প্রধান নির্বাচনে বেহেস্ত থেকে কাউকে হায়ার করে আনেনি। আমাদের পরিবারগুলোতে অনেক চরিত্র থাকে। এরজন্য এক পরিবারে মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারও আছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার বাবা-চাচা বা মামা ছিলেন এলাকার কুখ্যাত রাজাকার।
আরো পড়ুনঃ ড. কামালের মুখ ও মুখোশ!