ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন বাতিলের দাবিতে মশাল ও ঝাড়ুমিছিলের পর এবার জুতামিছিল করেছেন একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিএনপি নেতা কবির আহমেদ ভূঁইয়ার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা জুতা নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল থেকে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জেলা বিএনপির সম্মেলন বাতিল না করা পর্যন্ত প্রতিদিন বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারি দুই দফায় জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এক পক্ষ সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিলেও অপর পক্ষের বিরোধিতায় দুটি তারিখই পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে সম্মেলনের পক্ষে-বিপক্ষে বিএনপির দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি মিছিল করে। পরদিন রোববার রাতে সম্মেলন স্থগিতের দাবিতে একাংশের নেতা-কর্মীরা মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিটি ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বড় একটি অংশ এক পক্ষে। তাঁরা দুজনই জেলা বিএনপির ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আরেক পক্ষ সক্রিয় আছে। প্রায় দুই বছর ধরে উভয় পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছে।
হাফিজুর রহমান মোল্লার পক্ষের নেতা–কর্মীরা বলেন, কবির আহমেদ ভূঁইয়া লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির বড় ভাই। কবির আহমেদ আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সম্মেলন স্থগিতের দাবিতে আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের পাওয়ার হাউস রোড এলাকা থেকে হাতে জুতা নিয়ে মিছিল বের করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। মিছিলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনকে অবৈধ ঘোষণা করে নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনিপর সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম ও সদস্য কবির আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টেংকেরপাড় এলাকায় গিয়ে তাঁরা সমাবেশ করেন। সেখানে নেতা–কর্মীরা হাতে থাকা জুতা ছুড়ে কবির আহমেদের নামে তৈরি করা কুশপুত্তলিকায় নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে কুশপুত্তলিকায় আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা।
জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মঈনুল হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আনিসুর রহমান, জেলা যুবদলের সভাপতি শামীম মোল্লা ও সাবেক আহ্বায়ক মনির হোসেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্মেলন করার পাঁয়তারা চলছে। সম্মেলনে দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর যাঁরা ত্যাগ শিকার করে জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অথচ তাঁরাই প্রকৃত বিএনপি। তাঁদের বাদ দিয়ে সম্মেলন হবে না, হতে দেব না। কেন্দ্রীয় বিএনপিকে স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, যদি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শান্ত দেখতে চান, তাহলে আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে নতুন করে প্রতিটি থানায় কমিটি করার পর সম্মেলন করতে হবে। এর আগে আমরা সম্মেলন করতে দেব না।’
সমাবেশ থেকে মঈনুল হোসেন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আগামীকাল বুধবার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় সব নেতা–কর্মী ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, যাতে কোনো দালাল চক্র সম্মেলনের পক্ষে কোনো মিছিল করতে না পারে। কাল দিনব্যাপী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। আগামী বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।