
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কলা ও মানবিকী অনুষদের সাবেক ডীন সৈয়দ কামরুল আহসান (টিটু) ছেলের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক ক্রণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও মা গণিত বিভাগের শিক্ষক হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী।
বুধবার (৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলে এ ঘটনার বিচার চেয়ে অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৪৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈয়দ শাহ শাফায়াত ঋদ্ধ। ঋদ্ধ শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একজন শিক্ষকের ছেলে।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, একটি ব্যান্ডের দল করার মাধ্যমে ঋদ্ধের সাথে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের কিছুদিন পর ঋদ্ধ তাকে প্রপোজ করে। শুরুতে তিনি সম্পর্কে জড়াতে রাজি ছিলেন না কারণ কিছুদিন আগে তিনি আরেকটি সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু ঋদ্ধ বারবার তার সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে উৎসাহিত করে এবং এক পর্যায়ে সে বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে নানাভাবে বোঝানোর পর এক পর্যায়ে তিনি ঋদ্ধর সাথে সম্পর্ক জড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, সম্পর্কে জড়ানোর কিছুদিন পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে পরে তা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত যায়। এরপর মাঝেমধ্যে ঋদ্ধ কথা কাটাকাটির জেড়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় আবার বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সম্পর্ক ঠিক করে নেয়। পরে ঋদ্ধ আরেকটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। এর কিছুদিন পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানতে পারেন তিনি কনসিভ করেছেন। এ বিষয়টি
ঋদ্ধকে জানালে তিনি গর্ভপাতের জন্য চাপ দেন। কিন্তু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গর্ভপাত করতে রাজি না হলে আবার বিয়ে করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গর্ভপাত করান। গর্ভপাতের কিছুদিন দিন পর আবার তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন ঋদ্ধ।
অভিযোগপত্রে তিনি আরও বলেন, ৫ আগষ্টের পর ঋদ্ধ নিজেকে জাতীয়তাবাদি ছাত্রদলের সক্রীয় কর্মী হিসেবে দাবি করে। পরে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর ও শাখা ছাত্রদল সাবেক সহ-সভাপতি নবীনুর রহমান নবীনকে দিয়ে ছাত্রদলের সদস্য ফর্মও পূরণ করায় এবং পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে তার পারিবারিক প্রভাবপ্রতিপত্তি জাহির করতে থাকে। তিনি ঋদ্ধোর প্রতারণার কথা তার বাবাকেও জানানোর চেষ্টা করলে তিনি তাকে ব্লক করে দেন। পরে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বাবর এবং ছাত্রদল নেতা নবীনকে জানানোর চেষ্টা করলে তারা রেসপন্স করেনি এবং সদস্য ফরম পূরণের পর তারা যেভাবে ফোন দিতো সেভাবে দেয়না। এছাড়া ঋদ্ধ বাবর ও নবীনের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি করছে ও তার নামে মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে।
এদিকে ঋদ্ধোর সাথে সম্পর্ক ছিল এরকম চারজন নারীর সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমার একজন বন্ধুর মাধ্যমে ঋদ্ধ আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে আমি রাজি হয়নি কিন্তু এক পর্যায়ে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সম্পর্কের ছয় মাস অতিবাহিত হবার পর একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থানে দেখা করার কথা বলে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে ঋদ্ধ । আমি এজমার রোগী হওয়ায় সর্বোচ্চ আকুতি মিনতি করতে থাকি। অনেক চেষ্টার পর তার থেকে ছাড়া পেয়ে বাসায় চলে আসি। আমি সেসময় ছোট থাকায় বাসায় কাউকে কিছু বলতে সাহস পায়নি। এর কিছুদিন পর জানতে পারি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষার্থীর সাথেও ঋদ্ধোর সম্পর্ক ছিল।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি ঋদ্ধোর পাঁচ বছরের ছোট। একই সাথে স্কুল কলেজে পড়তাম। পরে তার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। সে প্রায়ই আমার থেকে নগ্ন ছবি নিতো। এরপর এক পর্যায়ে সে আমার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য চাপ দিতো। এ সময় আমি জানতে পারি আরেকজন সিনিয়র আপুর সাথে তার সম্পর্ক চলমান। পরে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি।
অভিযোগের বিষয়ে সৈয়দ শাহ শাফায়াত ঋদ্ধ বলেন, আমার নামে করা অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মেয়েটি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। সম্পর্ক শেষ করায় মেয়েটি নানাভাবে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
গত বছর ২০ এপ্রিল তার উপস্থিতিতে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গর্ভপাত করানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানতাম না এ বিষয়ে। ওই মেয়ের রক্ত শূন্যতার কথা বলে আমাকে নিয়ে গেছিল।
এ বিষয়ে জানতে ঋদ্ধর বাবা ও মা কে ফোন দেওয়া হলে তাদের পাওয়া যায় নি।

অভিযুক্ত ঋধর বাব মা
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি নবীনুর রহমান নবীনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে পাওয়া যায়নি তাকে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ঋদ্ধের সাথে ছাত্রদলের কোন সম্পর্ক নাই। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে এটাই চাওয়া।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, উপাচার্য স্যারের কাছে একজন শিক্ষার্থী অভিযোগপত্র নিয়ে এসেছিলেন। স্যার আজকে অফিসে ছিলেন না, তাই অফিসে দিয়ে আসতে পারেন। আমি এ বিষয়ে জানি না।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে পাওয়া যায়নি তাকে।