যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নীরব; পশ্চিমা বিশ্বে প্রশ্নের মুখে রাশিয়ার কৌশল
দীর্ঘদিন ধরে চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে আলোচনার এই প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি যুদ্ধবিরতি বা হামলা বন্ধের বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানায়, পুতিন আলোচনার পক্ষে হলেও ইউক্রেনকে আগে কিছু ‘বাস্তবতা’ মেনে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল (দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া) মেনে নেওয়া এবং পশ্চিমা সমর্থন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইউক্রেন এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অতীত অভিজ্ঞতায় দেশটির অবস্থান স্পষ্ট—যুদ্ধ থামানো, ভূমি পুনরুদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আলোচনা ছাড়া তারা রাজি নয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “আলোচনার প্রস্তাব ভালো, তবে যুদ্ধবিরতি ছাড়া তা অকার্যকর। প্রকৃত শান্তির জন্য হামলা থামাতে হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, “রাশিয়ার বক্তব্য শুনতে ইতিবাচক মনে হলেও কার্যত কোনো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা না থাকায় প্রস্তাবটি অস্পষ্ট ও কৌশলগত মনে হচ্ছে।”
বিশ্লেষণ: শান্তির বার্তা না কি রাজনৈতিক সময়ক্ষেপণ?
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পুতিনের এই প্রস্তাব হয়তো রাশিয়ার ওপর বাড়তে থাকা পশ্চিমা চাপ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার একটি রাজনৈতিক কৌশল। আসন্ন জেনেভা শান্তি সম্মেলন ও জাতিসংঘ অধিবেশনের আগে বিশ্ব জনমত নরম করতেই এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
যুদ্ধবিরতির অনুপস্থিতি এবং আংশিক পূর্বশর্ত আরোপ এই প্রস্তাবকে কৌশলগত আলোচনার ছদ্মাবরণ হিসেবে দেখছে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আলোচনার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
যুদ্ধের পটভূমি
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর তিন বছরের এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ। ইউক্রেনের বিশাল অংশজুড়ে ধ্বংস, উদ্বাস্তু সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। এখনো যুদ্ধের কোনো স্থায়ী সমাধান বা শান্তিচুক্তির বাস্তব অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।