কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়নকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের বাঁ পাশের একটি চাকা খোলে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় এভিয়েশন খাতে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ার সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।
বিমান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ম্যানুফ্যাকচারারের নির্দেশনা অনুযায়ী ছয় মাস অন্তর ল্যান্ডিং গিয়ার মেইনটেন্যান্স বাধ্যতামূলক হলেও, ওই ফ্লাইটে তা অনুসরণ করা হয়নি। নিয়মিত গ্রিজিং না করার ফলে গিয়ার শুকিয়ে যায় এবং অতিরিক্ত চাপ সইতে না পেরে উড়ালকালে একটি চাকা খুলে পড়ে।
ঘটনার পরপরই ফ্লাইট সেফটি ম্যানুয়াল অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফ্লাইট সেফটি প্রধান ক্যাপ্টেন এনামুল হক তালুকদারকে। বাকি সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ড্যাশ৮-৪০০ এর ফ্লিট প্রধান ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মো. নাজমুল হক এবং একজন পাইলট প্রতিনিধি। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
তদন্তে অংশ নেওয়া একজন ইঞ্জিনিয়ার জানান, প্রতিটি উড়োজাহাজ ফ্লাইটের আগে ইন্সপেকশন করা হয় এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের এটি সম্পন্ন করতে হয়। ঘটনার দিনও উড়োজাহাজটির ইন্সপেকশন করা হয়েছিল এবং ‘সবচেয়ে হুইল কন্ডিশন স্যাটিসফ্যাকটরি’ বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কীভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটল?
ঘটনার সময় কক্সবাজার বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ আরেকটি উড়োজাহাজের পাইলট খেয়াল করেন যে, একটি বস্তু উড়োজাহাজ থেকে পড়ে যাচ্ছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে বিষয়টি জানান। এর পর পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ সতর্ক হয়ে বাম পাশের পরিবর্তে ডান পাশে চাপ দিয়ে এবং জরুরি সহায়তার মাধ্যমে ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণ করান।
ঘটনার পর বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা রওশন কবীর জানান, প্রতিটি উড়োজাহাজের ইন্সপেকশন বেবিচক-লাইসেন্সধারী ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারাই করা হয়। তবে তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, উড়োজাহাজটি ইতিপূর্বে ৯৭৬৮ বার ল্যান্ডিং করেছে এবং একই দিনে সিলেট রুটেও চলাচল করেছিল। ভাগ্যক্রমে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও, এই ঘটনা ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ ও ইঞ্জিনিয়ারিং তদারকি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।